বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন

রাষ্ট্রায়ত্ব জুট মিল বন্ধ ঘোষণা: খুলনায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ, পিপিপি’র ভিত্তিতে চালুর ঘোষণা জেলা প্রশাসনের

এস.এম. সাঈদুর রহমান সোহেল, খুলনা ব্যুরো::

রাষ্ট্রায়ত্ব জুট মিল বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ব ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে নিজ নিজ মিলের সামনে দুই ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

সোমবার (২৯ জুন) সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১১টা পযর্ন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রয়াত্ব পাটকল সিবিএ নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ এই কর্মসূচি আহবান করে। এই কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ১ জুলাই থেকে অমরণ অনশন পালনের ঘোষণা রয়েছে।

অপরদিকে, খুলনার সাতটিসহ রাষ্ট্রায়ত্ব সকল পাটকল সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে সরকার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। সোমবার সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে এ ঘোষণা দেয়া হয়। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পাটকল সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক সরদার আব্দুল হামিদ বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসক্রিপশন অনুয়ায়ী বেসরকারি পাটকলের মালিকদের যড়যন্ত্র এবং আমলাতন্ত্রের চক্রান্তে ২৫ জুন আন্ত: মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ২৫টি পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। ৩০ জুনের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হলে ১ জুলাই থেকে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আমরন অনশন কর্মসূচি শুরু করবেন।

অপরদিকে, সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে জানানো হয়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া মিলগুলোতে চলমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান এবং পাটখাতকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে কর্মরত শ্রমিকদের গোল্ডেল হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শতভাগ পাওনা পরিশোধ করা হবে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালকদার আব্দুল খালেক। সভাপতিত্ব করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।

প্রেস কনফারেন্সে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। শ্রমিকদের কথা চিন্তা করেই সরকার এ পর্যন্ত পাটকলগুলোতে ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে মিলগুলোর আধুনিকায়ন করেই চালু করা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে মিলগুলো বন্ধ হবে না, আবার শ্রমিকও বেকার হবে না। কারণ পরবর্তীতে এসব মিলে এ অঞ্চলের শ্রমিকদেরই কর্মসংস্থান অব্যাহত থাকবে।

প্রেস কনফারেন্সে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, শ্রম আইন অনুযায়ী দুই মাস আগে অর্থাৎ ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে নোটিশ দিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। ইতোমধ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সভায় এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের সকল বকেয়া পাওনা ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৪০ শতাংশ এবং বাকি ৬০ শতাংশ পাওনা টাকা পরবর্তী দু’টি অর্থ বছরে ৩০ শতাংশ করে পরিশোধ করা হবে। এছাড়া ২০১৪ সাল থেকে অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের পাওনা এককালীন পরিশোধ করা হবে। তিনি আরও জানান, সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিটি শ্রমিক প্রায় সাড়ে ১২ লাখ থেকে ৫৪ লাখ পর্যন্ত টাকা পাবেন। মিলগুলো পরবর্তীতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারীত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে চালু হলে এসব মিলে কর্মরত দক্ষ শ্রমিকরাই নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।

প্রেস কনফান্সে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসালম, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইউসুপ আলী, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com